দেশ যখন চরম অর্থ সংকটে তখন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে শত শত কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা। প্রমাণ মিলেছে সাতটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা এর সঙ্গে জড়িত।
বিমানবন্দরে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ, ব্যাংক কর্মকর্তারা বৈদেশিক মুদ্রা কিনলেও তা ব্যাংকিং চ্যানেল ও রেকর্ড বইয়ে দেখান না। ব্যাংক কাউন্টার ব্যবহার করে নিজেরা ব্যক্তিগতভাবে কেনাবেচা করেন বৈদেশিক মুদ্রা। পরে তা পাচার করে দেন।
বন্দরে প্রবাসীদের এক্সচেঞ্জ করা বৈদেশিক মুদ্রা ব্যাংকিং চ্যানেলে রাষ্ট্রীয় রিজার্ভে জমা হওয়ার কথা। কিন্তু দুদক সূত্র বলছে, অসাধু ব্যাংক কর্মকর্তারা তা ব্যাংকিং চ্যানেলে সংগৃহীত না দেখিয়ে নিজেরা কিনে খোলাবাজারে বিক্রি করে দেন, যা পরবর্তীতে লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে।
গত ২৭ মার্চ বিদেশি মুদ্রার অবৈধ ক্রয়-বিক্রয় ও পাচারের অভিযোগে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, বেসরকারি মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, এভিয়া মানি এক্সচেঞ্জার ও ইম্পেরিয়াল মানি এক্সচেঞ্জের ২১ কর্মকর্তা-কর্মচারীর নামে মামলা করে দুদক। সেই থেকে চক্রটি সেবা না দিয়ে বেশিরভাগ সময় বন্ধ রাখছে ব্যাংকের কাউন্টার। ফলে প্রবাসীরা মানি এক্সচেঞ্জ করতে গিয়ে বিপাকে পড়ছেন।
দুদকের অনুসন্ধান-সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, কয়েক দশক ধরে বিমানবন্দরে অবস্থিত ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তারা ব্যাংকিং চ্যানেলবহির্ভূত যে অর্থ কেনাবেচা করে আসছেন, সেটা সরকারের রিজার্ভে জমা পড়ত না। ফলে সম্প্রতি দুদকের অভিযানের পর তারা বিমানবন্দর থেকে বৈধভাবে বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করার বদলে বেশিরভাগ সময়ই ব্যাংকের কাউন্টারগুলো নির্দিষ্ট সময়ের আগেই বন্ধ করে রাখছে। কোনো কোনো ব্যাংকের কাউন্টার খোলা থাকলেও মেলে না সেবা।
দুদকের অনুসন্ধানে জানা যায়, এই ব্যাংক কর্মকর্তারা প্রবাসীদের কাছ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করার সময় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভাউচার দেয় না। কেউ ভাউচার চাইলে অসাধু ব্যাংক কর্মকর্তা ও মানি চেঞ্জার কর্মকর্তারা স্বাক্ষরবিহীন, ভুয়া ভাউচার দিতেন।
নাজিউল আলম নামে একজন প্রবাসী ভুক্তভোগী বলেন, আমি গত ২ এপ্রিল সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে দেশে আসি। কিছু দিরহাম এক্সচেঞ্জ করতে প্রথমে সোনালী ব্যাংকের কাউন্টারে যাই। সেখানে দীর্ঘ লাইন দেখে পূবালী ব্যাংকের কাউন্টারে যাই। তাদের আচরণ দেখে মনে হলো, তাদের খুব একটা আগ্রহ নাই। কত দিরহাম এক্সচেঞ্জ করব শুনে মুখটা আরও ফ্যাকাশে হয়ে গেল। পরে বলল, না, এক্সচেঞ্জ হবে না। তারা এমন করে কেন?
এসব বিষয়ে দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন সম্প্রতি এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছেন, ‘অবৈধভাবে ডলার ক্রয়-বিক্রয়ের কারণে বৈধ ব্যাংকিং চ্যানেল থেকে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে। অবৈধ এসব অর্থ দেশের বাইরে পাচারও হতে পারে। দুদক এখন থেকে এসব বিষয়ে নিয়মিত তদারক করবে।’ দুদক সচিবের বক্তব্যের পরও বাস্তবে এর সুফল পাওয়া যাচ্ছে না।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি বিমানবন্দরে অর্থ পাচারের বিষয়ে একটি অভিযান পরিচালনা করে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপপরিচালক সৈয়দ নজরুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন একটি দল। এই অভিযানে বিমানবন্দরের সাতটি ব্যাংক ও দুটি মানি এক্সচেঞ্জার প্রতিষ্ঠানের অর্থ পাচারের সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পায় সংস্থাটি। অভিযানের পর গত ২৭ মার্চ বিদেশি মুদ্রা অবৈধ ক্রয়-বিক্রয় ও অর্থ পাচারের অভিযোগে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ব্যাংক ও মানি এক্সচেঞ্জের ২১ কর্মকর্তা-কর্মচারীর নামে মামলা করে দুদক।