নাজমুল হোসেন শান্ত একবার দুবার করে অন্তত পাঁচবার বললেন, ‘প্ল্যান কাজ করেছে।’ ১০ মিনিটের মতো দীর্ঘ সংবাদ সম্মেলনে গত বুধবার সতীর্থদের নিয়েও স্বস্তির কথাই শোনান টাইগার অধিনায়ক। দল হয়ে ওঠার তাগিদ নিয়ে শুরু করা শান্ত সন্তুষ্ট দল হিসেবে খেলতে পেরেই। বোলিং, ব্যাটিং কিংবা ফিল্ডিংয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা তরুণ দল দেখাচ্ছে স্বপ্নও।
সিলেটে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে পিছিয়ে পড়েছিল বাংলাদেশ। তবে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে টাইগারদের ফেরার লড়াই মুগ্ধ করেছিল সবাইকে। অধিনায়ক শান্ত ওইদিন হারার পরও সন্তুষ্ট ছিলেন। সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে তার ব্যাটেই আসে কাঙ্ক্ষিত জয়। রানপ্রসবা উইকেটে শ্রীলঙ্কার ব্যাটারদের আটকে রাখার কাজটা করেছিলেন শরিফুল-তাসকিনরা। ব্যাটিংয়ে বাকি কাজ সামলে নেন লিটন-শান্তরা। বড় জয় নিশ্চিত করেই মাঠ ছাড়েন শান্ত।
সমতায় ফেরার পর শান্ত স্তুতি গেয়েছিলেন সতীর্থদের, ‘ম্যাচ জিতে ভালো লাগছে। আমরা দুইটা ম্যাচেই ভালো ক্রিকেট খেলেছি। দুর্ভাগ্যক্রমে প্রথম ম্যাচটি জিততে পারিনি। কিন্তু দুইটা ম্যাচেই টিম হিসেবে খেলতে পেরে খুবই খুশি।’
এই দল হিসেবে খেলতে পেরেই শান্ত বাজিমাত করছেন। লঙ্কান সিরিজের আগে অন্তর্বর্তীকালীন হিসেবে জাতীয় দলকে তিন সংস্করণেই নেতৃত্ব দিয়েছেন শান্ত। সাকিব আল হাসানের চোটে গেল ওয়ানডে বিশ্বকাপেও সামলেছেন অধিনায়কত্বের গুরুদায়িত্ব। তার নেতৃত্বে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠে টেস্ট জয়, কিউইদের মাটিতে টি-টোয়েন্টিতে সিরিজ জয় কিংবা প্রথমবার ওয়ানডে জয়ে প্রশংসিত হয়েছেন।
সম্মিলিত প্রয়াসে পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়েছে জানিয়ে শান্ত বলেন, ‘আমার মনে হয় প্রথম ম্যাচের পর খুব ভালো পরিকল্পনা হয়েছে। বোলারাও প্ল্যানটা ঠিকঠাক কাজে লাগিয়েছে। ওটাই আমদের কাজে দিয়েছে, তাতেই সবাই পরিকল্পনা ঠিকভাবে বাস্তবায়িত করেছে।’
অধিনায়কত্ব পেয়ে শান্ত জানিয়েছিলেন তার চাওয়া টেস্ট মানসিকতা, ওয়ানডেতে ট্রফি আর টি-টোয়েন্টিতে উন্নতি। সাকিব আল হাসানের গড়ে দেওয়া মোটামুটি ধারাবাহিক একটি দল পেয়েছেন শান্ত। গত বছর ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডকে ধবলধোলাইয়ের পর নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টি-টোয়েন্টি সিরিজ ড্র করেছে বাংলাদেশ। ২০ ওভারের খেলায় গত বছরের সেই ধারা বজায় রাখাই শান্তর বিরাট সাফল্য।
সেই ধারাই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের শেষ ম্যাচ জিতে ধরে রাখতে চান শান্ত, ‘আমার মনে হয় সবাই টিমের জন্য খেলছে যা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম ম্যাচটিতে দ্রুত উইকেট যাওয়ার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি তা বাড়তি একটা বিশ্বাস দিয়েছে সবার মাঝে, যে আমরা যেকোনো অবস্থা থেকে ফিরতে পারি। আলাদা করে কোনো ব্যাটসম্যান বা বোলারদের কৃতিত্ব দিতে চাই না, পুরো দলগত চেষ্টা ছিল।’
যোগ করেন, অধিনায়কত্বের কাজটা কখনোই সহজ নয়। বাংলাদেশের দলের নেতৃত্ব দেওয়াটা অবশ্য একটু বেশিই কঠিন। তবে নাজমুল কঠিন চ্যালেঞ্জের মধ্যেও খুঁজেছেন অনুপ্রেরণার, ‘আমার মনে হয় কাজটা আমার জন্য এখন আরও চ্যালেঞ্জিং। তবে পরিকল্পনা করা একটু সহজ হবে। প্রত্যেক খেলোয়াড় সম্পর্কে জানতে হবে। যদিও আমরা সবাই খেলার মধ্যেই থাকি, সবার সঙ্গে দেখা হয়, কথা হয়। আমার মনে হয় পরিকল্পনা করার দিক থেকে এটা একটু হলেও সুবিধা হয়। তিন সংস্করণেই দায়িত্বে আছি। আশা করছি সামনে ভালো কিছুই হবে।’
বাংলাদেশ দলের সমর্থকরাও নিশ্চয়ই তেমন আশাই করছেন। শান্ত ব্রিগেড একটা দল হিসেবে খেলুক, খুব কঠিন জায়গা থেকেও সাফল্য বয়ে আনুক— এ স্বপ্নই দেখছে ১৬ কোটি মানুষ।