সিলেটে অলিখিত ফাইনালে বাংলাদেশকে ২৮ রানে হারিয়ে ২-১ ব্যবধানে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতে নিল শ্রীলঙ্কা। লঙ্কানদের বিপক্ষে প্রথমবার টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের যে স্বপ্ন দেখেছিলেন নাজমুল হোসেন শান্তরা, সেটি স্বপ্ন হয়েই থাকল।
শ্রীলঙ্কার দেওয়া ১৭৫ রানের লক্ষ্য তাড়ায় পাওয়ারপ্লেতেই ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় বাংলাদেশ। ২৫ রানেই ৫ উইকেট হারায় স্বাগতিকেরা। ৩২ রানে হারায় ষষ্ঠ উইকেট। বিপর্যয়ে রুখে দাঁড়িয়ে লড়াই করেছেন লেজের ব্যাটার রিশাদ হোসেন। তিনি ছক্কার রেকর্ড গড়ে ৩০ বলে ৫৩ রানে ফিরলে বাংলাদেশের হারও প্রায় নিশ্চিত হয়ে যায়। শেষ দিকে ছোটখাটো ঝড় তোলেন তাসকিন আহমেদ। তবে দলের জয়ের জন্য সেটি যথেষ্ট ছিল না। বাংলাদেশের ইনিংস থামে ১৪৬ রানে।
মাতিশা পাতিরানার স্থলাভিষিক্ত হিসেবে মাঠে নামা তুশারাই যেন ম্যাচটির ফল গড়ে দিলেন। ২০ রানের বিপরীতে ৫ উইকেট নিয়ে শ্রীলঙ্কার জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল এই পেসারের। তাঁর বোলিং অ্যাকশনও অনেকটা চোটে ছিটকে যাওয়া পাতিরানার মতোই। পাওয়ারপ্লেতে হ্যাটট্রিকসহ বাংলাদেশের ৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণে এনে দলকে।
তৃতীয় ওভারে ধসের শুরুটা হয় ধনাঞ্জয়া ডি সিলাভার হাত ধরে। তিনিও সুযোগ পাননি আগের দুই টি-টোয়েন্টি ম্যাচে। ৭ রানে ফেরান ওপেনার লিটন দাসকে। চতুর্থ ওভারে তুশারার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের প্রথম হ্যাটট্রিকে ধসে পড়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং অর্ডার। সেই ওভারের দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ বলে যথাক্রমে ফেরান—নাজমুল হোসেন শান্ত, তাওহীদ হৃদয় ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে। শান্ত ও হৃদয়কে বোল্ড করার পর মাহমুদউল্লাহকে ফেরান এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে।
নিজের পরের ওভারে এসে আরেক ওপেনার সৌম্য সরকারকেও বোল্ড করেছেন। ১০ বলে ১১ রান আসে সৌম্যর ব্যাট থেকে। আগের দুই ম্যাচে নিষেধাজ্ঞার কারণে খেলতে পারেননি শ্রীলঙ্কার নিয়মিত অধিনায়ক ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা। তবে ফেরার ম্যাচে ৯ম ওভারে জাকের আলী অনিককে ৪ রানে ফিরিয়ে ম্যাচ থেকেই বাংলাদেশকে একরকম ছিটকে দেন লঙ্কান অধিনায়ক।
সপ্তম উইকেটে শেখ মেহেদী হাসান ও রিশাদের ৩১ বলে ৪৪ রানের জুটি বাংলাদেশকে ১০০ পেরোনোর সুযোগ করে দেয়। মেহেদীর ব্যাট থেকে আসে ১৯ রান। কিন্তু অষ্টম উইকেটে তাসকিন-রিশাদের ২১ বলে ৪১ রানের জুটি ম্যাচে উত্তেজনা ফেরায়। লঙ্কান বোলারদের ওপর ছক্কার ঝড় বইয়ে ২৬ বলে ফিফটি তুলে নেন রিশাদ। তাঁর ৫৩ রানের ইনিংসে ছিল ৭টি ছক্কা। টি-টোয়েন্টি ম্যাচে এটাই বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ছক্কা। ২১ বলে ৩১ রান করেছেন তাসকিন।
শ্রীলঙ্কার হয়ে ৫ উইকেট নেওয়া এ ম্যাচের আগে তুশারা খেলেছেন সাতটি টি-টোয়েন্টি। নামের পাশে উইকেট ছিল ৬ টি। সেরা বোলিং গত বছরের সেপ্টেম্বরে এশিয়ান গেমসে, আফগানদের বিপক্ষে ৪ উইকেট নিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর ইকোনমি ছিল ১০ ছুঁই ছুঁই। বাংলাদেশের বিপক্ষে এ ম্যাচে তাঁর ইকনোমি ৫.০০।
তার আগে এই ম্যাচেও টস জিতে আগে লঙ্কানদের ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশকে পেলেই কুশল মেন্ডিস জ্বলে ওঠেন—এই তো হয়ে আসছে তাঁর ক্যারিয়ারের শুরু থেকে। আজ সিলেটে সেই পুরোনো দৃশ্য দেখা গেল আবারও। তাঁর দুর্দান্ত ফিফটিতেই বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজ নির্ধারণী তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে ৭ উইকেটে ১৭৪ রানের সংগ্রহ পায় শ্রীলঙ্কা। ৫৫ বলে ৮৬ রান আসে মেন্ডিসের ব্যাট থেকে। বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে রিশাদ ও তাসকিন নিয়েছেন ২টি করে উইকেট।