পবিত্র শবে বরাত আগামীকাল। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদায় আগামীকাল রোববার দিবাগত রাতে মহান রাব্বুল আলামিনের রহমত কামনায় ‘নফল ইবাদত-বন্দেগীর’ মধ্যদিয়ে পবিত্র শবে বরাত পালন করবে।
হিজরি বর্ষের শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাছে সৌভাগ্যের রজনী। মহিমান্বিত এ রাতে মহান রাব্বুল আলামিন তাঁর বান্দাদের ভাগ্য নির্ধারণ করেন। ধর্মপ্রাণ মুসল্লীরা এ রাতে মহান আল্লাহর রহমত ও নৈকট্য লাভের আশায় নফল নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত, জিকির-আজগারসহ বিভিন্ন ইবাদত বন্দেগী করে থাকেন।
শবে বরাত উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী পৃথক বাণী প্রদান করেছেন।
‘শবেবরাত’ শব্দটি এসেছে ফারসি ভাষা থেকে। ‘শব’ শব্দের অর্থ রাত আর ‘বরাত’ শব্দের অর্থ সৌভাগ্য। দুয়ে মিলে সৌভাগ্যের রাত। আরবিতে এ রাতকে বলা হয় ‘লাইলাতুল বরাত’। অর্থ সৌভাগ্যের রাত। ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এ রাতে তার রহমতের দরজা খুলে দেন। হজরত মুয়ায ইবনে জাবাল (রা.) বর্ণিত এ রাতের ফজিলতবিষয়ক একটি হাদিসে বলা হয়েছে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহ তায়ালা অর্ধ শাবানের রাতে (শাবানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতে) সৃষ্টির দিকে (রহমতের) দৃষ্টি দেন এবং শিরককারী ও বিদ্বেষ পোষণকারী ছাড়া অন্য সবাইকে ক্ষমা করে দেন।’ (সহিহ ইবনে হিব্বান : ১৩/৪৮১)
বরকতময় এ রাত সম্পর্কে অন্য এক হাদিসে বলা হয়েছে, ‘যখন শাবান মাসের মধ্যবর্তী রাত আসবে তখন তোমরা এ রাতে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করবে এবং দিনে রোজা পালন করবে। কেননা এই দিন সূর্যাস্তের পরই আল্লাহ দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন এবং বলেন, ‘কে আছো ক্ষমা প্রার্থনাকারী, আমি তাকে ক্ষমা করে দেব। কে আছো রিজিকপ্রার্থী, আমি তাকে রিজিক দেব। কে আছো বিপদগ্রস্ত, আমি তাকে বিপদমুক্ত করব। ফজর হওয়া পর্যন্ত আল্লাহ তায়ালা এ কথা বলতে থাকেন।’ (ইবন মাজাহ: ১৩৮৮)
শবেবরাতের রাতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা বিগত দিনের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন। ইবাদত, জিকির, মিলাদ-মাহফিল, নফল নামাজ ও কুরআন তেলাওয়াত করেন আগামী দিনের মঙ্গল কামনায়। মৃত স্বজনের কবর জিয়ারত করেন অনেকে। পবিত্র শবেবরাতে নানা রকম হালুয়া, ফিরনি, রুটি তৈরির প্রচলন রয়েছে। যা বিলিয়ে দেওয়া হয় পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন ও গরিব-দুঃখীর মাঝে। অনেকে রমজানের প্রস্তুতি হিসেবে এ দিন রোজা রাখেন। মসজিদে মসজিদে হয় বিশেষ মোনাজাত। নিজের, পরিবার, পরিজন, দেশ ও জাতির জন্য করা হয় বিশেষ দোয়া। অনেক এলাকায় দোয়ার পর তবারক বিতরণ করা হয়।
তারাবাতি, আগরবাতি, মোমবাতি জ্বালানোসহ নানান আলোকসজ্জায় এ রাতে সেজে ওঠে পুরান ঢাকা। শবেবরাত উপলক্ষে পুরান ঢাকাবাসীর মাঝে নতুন পোশাক কেনা এবং পরারও চল রয়েছে। শবেবরাতে আতশবাজি, পটকা না ফুটানো বিষয়ে রয়েছে মহানগর পুলিশের নির্দেশনা।