ইসলামি শরিয়তে গুনাহের দায়ভার সাধারণত ব্যক্তির নিজের। কারো গুনাহের জন্য অন্য কাউকে দোষারোপ করা হবে না। কিন্তু নারীর কিছু পাপের জন্য স্বামী দায় এড়াতে পারে না।
তারা হলো সেসব পুরুষ, যারা পরিবার পরিজন বা অধীনস্থকে সঠিক পথে পরিচালিত করে না, উপরন্তু তাদের গুনাহের কাজ দেখেও বাধা দেয় না। ইসলামি পরিভাষায় ওরা হলো দাইয়ুস। ইসলামে ওই পুরুষকে দাইয়ুস বলা হয়, যে তার স্ত্রী, বোন ও পরিবারের নারীদের অবাধ চলাফেরা, অশালীন জীবনযাপন ও পাপপূর্ণ জীবনাচার মেনে নেয় এবং তাদের এসব গর্হিত কাজ করা থেকে বাধা দেয় না। দাইয়ুস ব্যক্তি হতে পারে স্বামী, পিতা কিংবা ভাই।
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘দাইয়ুস হলো সেই ব্যক্তি—যে তার পরিবারের নিকট কে প্রবেশ করল এ ব্যাপারে ভ্রুক্ষেপ করে না।’ (তাবরানি: ১৩১৮০ আততারগিব ওয়াততারহিব: ৩৪৭৬)। অপর হাদিসে রাসুলুল্লাহ বলেছেন, ‘ওই ব্যক্তিকে দাইয়ুস বলা হয় যে তার পরিবারের অশ্লীলতাকে মেনে নেয়।’ (মুসনাদে আহমদ: ৫৩৭২)
ইসলামে দাইয়ুস অভিশপ্ত ও ঘৃণিত। দুনিয়াতে যেমন তাদের মর্যাদা নেই, পরকালেও তারা জান্নাতের নেয়ামত থেকে বঞ্চিত হবে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘তিন শ্রেণির লোক জান্নাতে যাবে না—মা-বাবার অবাধ্য, দাইয়ুস এবং পুরুষের বেশ ধারণকারী নারী।’ (মুসতাদরাক হাকেম: ২২৬)
আরও পড়ুন: হাদিসে ৭টি সর্বনাশা গুনাহ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ
রাসুলুল্লাহ (স.) আরও ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই সর্বশক্তিমান আল্লাহ তাআলা যখন জান্নাত সৃষ্টি করেছেন তখন জান্নাতকে বলেছেন, আমার সম্মান-গৌরব ও পরাক্রমশালীর শপথ! কৃপণ, মিথ্যাবাদী এবং দাইয়ুস ব্যক্তি তোমার মধ্যে প্রবেশ করবে না। (নাসায়ি, জাকাত অনুচ্ছেদ: ২৫৬২; মুসনাদে আহমদ: ২/১৩৪)
নামাজ দোয়া পড়লেও দাইয়ুস জাহান্নামে যাবে বলে হুঁশিয়ারি এসেছে হাদিসে, যদিও তার ইবাদত কবুল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ গুনাহগারেরও নামাজ দোয়া কবুল হয়। এ সম্পর্কে ফতোয়ার কিতাবে এসেছে, ‘যদি কোনো ব্যক্তির স্ত্রী পর্দা না করে তাহলে সে ব্যক্তির কর্তব্য হচ্ছে স্ত্রীকে পর্দা করার ওপর বাধ্য করা। কিন্তু তা না করে যদি সে স্ত্রীর বেপরোয়া, পাপপূর্ণ জীবনযাপন মেনে নেয়, একইসঙ্গে সে ইবাদত-বন্দেগিও করে, তারপরও ওই স্বামী গুনাহগার ও জাহান্নামি হবে। আর নামাজ ও ইবাদত গুনাহগারেরও কবুল হয়। (আপ কে মাসায়েল অওর উন কা হল: ৮/৬৮, ফতোয়ায়ে মাহমুদিয়া: ২৮/৯১)
সুতরাং ইবাদত-বন্দেগি পরিপূর্ণরূপে কবুল হওয়ার জন্য অবশ্যই দাইয়ুসের মন্দ গুণাবলী থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। তা না হলে আল্লাহর কঠিন আজাব থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে না।
পরিবারবর্গকে দ্বীনি শিক্ষা দিতে হবে। পর্দার বিধান সম্পর্কে, বেহায়াপনা ও অশ্লীলতার পরিণতি সম্পর্কে উপযুক্ত শিক্ষা দিতে হবে। তা না হলে তাদের গুনাহের কারণে নিজেকে গুনাহগার হতে হবে। যেমন—কোনো নারীকে যদি নিয়মিত বাইরে যেতে হয় এবং বাইরে গিয়ে সে গুনাহে জড়িয়ে পড়ে, তাহলে স্বামী বা বাবা পদক্ষেপ নেবেন। কোনো পদক্ষেপ না নিলে এবং নারী বাইরে গিয়ে একইভাবে গুনাহ করলে অভিভাবক গুনাহগার হবে। বাবা কিংবা স্বামী যে-ই অভিভাবক হোক না কেন, সে গুনাহগার হবে এবং দাইয়ুস হিসেবে বিবেচিত হবে।
এই জঘন্য পরিস্থিতি থেকে বাঁচার জন্যই ইসলাম অধীনস্থদের কোরআন সুন্নাহর শিক্ষা দিয়ে বড় করার দায়িত্ব দিয়েছে অভিভাবককে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে- ‘হে ইমানদারগণ! তোমরা নিজেদের ও পরিবার-পরিজনকে রক্ষা করো আগুন থেকে, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর। যাতে নিয়োজিত আছে কঠোর স্বভাব ও নির্মম হৃদয়ের ফেরেশতা, যারা আল্লাহর আদেশ অমান্য করে না।’ (সুরা তাহরিম: ৬)
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বপ্রাপ্ত এবং তোমাদের প্রত্যেককেই তার দায়িত্বাধীনদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে, রাষ্ট্রনেতা তার প্রজাদের সম্পর্কে দায়িত্বশীল আর তাকে তাদের পরিচালনার ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। একজন পুরুষ তার পরিবারের ব্যাপারে দায়িত্বশীল, তাকে তাদের পরিচালনার ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। একজন মহিলা তার স্বামীর ঘরের ব্যাপারে দায়িত্বশীলা, তাকে সেটার পরিচালনার ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। একজন পরিচারক তার মালিকের সম্পদের সংরক্ষক, আর তাকে সেটার ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এককথায় তোমরা সবাই দায়িত্বশীল আর সবাই জিজ্ঞাসিত হবে যার যার দায়িত্ব সম্পর্কে।’ (বুখারি: ৭১৩৮; মুসলিম: ১৭০৫)
এখানে উল্লেখ্য, যেসব নারী স্বামী বা বাবার অবাধ্য, তাদের গুনাহের ভার স্বামী/বাবাকে নিতে হবে না। বরং ওই গুনাহ নারীকেই বহন করতে হবে। এর দলিল হলো— ‘একের পাপের বোঝা অন্যে বহন করবে না।’ (সুরা আনআম: ১৬৪)
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে প্রত্যেক বিষয়ে শরিয়তের বিধি-বিধান যথাযথ মেনে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।