“মা
মানে তো দুটো আঙ্গুল, হাঁটতে শেখার গান
জন্ম,
জগৎ-জীবন জুড়ে দুঃখ জয়ের তান।
মা
সকলের মাথার উপর সুশীতল এক ছায়া
মা
হলো ঠিক, একাই তিনি এক সমুদ্র মায়া।”
মা ছোট্ট একটি শব্দ, এমন
একটি ডাক যার পরশ সুশীতল এক ছায়া, অষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকা অসাধারণ মায়া।
কিছুদিন আগে একটা লেখা
পড়েছিলাম (লেখকের নাম মনে নেই)
যেখানে একজন জাপানি বৃদ্ধ সৈনিক ট্রেনে বসা তার সহযাত্রীকে প্রসঙ্গক্রমে
স্মৃতিচারণে বলছেন, “আমি যুদ্ধ ক্ষেত্রে কত মানুষকে মারা যেতে দেখেছি। তাদের মধ্যে
যারা বয়স্ক অর্থাৎ সন্তানাদি আছে তারা মৃত্যুর পূর্বে সন্তানের কথা স্মরণ করছেন আর
যাদের সন্তান নেই অর্থাৎ অল্প বয়সের তারা চিৎকার করে তার মাকে ডাকছেন। এটাই
বাস্তবতা। আমি কেন মৃত্যুমুখ থেকে বেঁচে ফিরেছি জানো? কারণ, আমার মা আমার
বাধ্যতামূলক যুদ্ধযাত্রার সময় বলেছিলেন, “তুমি কথা দাও বাবা, যুদ্ধের পর আমাদের
আবার দেখা হবে।”
আমরা জানি পবিত্র ইসলাম
ধর্মে মাকে সুমহান মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করা হয়েছে। যেখানে আমাদের প্রিয় নবি হযরত
মুহাম্মদ (সঃ) পিতামাতার প্রতি সন্তানের কর্তব্য বুঝাতে গিয়ে প্রথম তিনবারই বলেছেন
মায়ের কথা, চতুর্থবার বলেছেন বাবার কথা।
মাতৃত্ব আসলে কেমন?
একবার ডিগ্রি তৃতীয় বর্ষ
চূড়ান্ত পরীক্ষার প্রত্যবেক্ষক ছিলাম। দুইজন বয়স্ক মহিলা যারা নিজেরা দুইটি
ফুটফুটে বাচ্চার নানু, বারান্দায় হাটাহাটি করছেন তাদেরকে কোলে নিয়ে। এ দৃশ্য
আমাদের কাছে অতি পরিচিত যখন থেকে চাকরিতে আছি। কারণ অনেক ছাত্রীদের পড়াশুনা করা
অবস্থায় বিয়ে হয়ে যায়। এক থেকে ছয় মাস বয়সী বাচ্চারা মায়ের বুকের দুধ ব্যতীত
বাইরের খাবারে অভ্যস্ত হয় না। তাছাড়া পরীক্ষার চার ঘন্টা এবং আসা যাওয়ার আরো
অনেকটা সময় বাচ্চা না খেয়ে থাকতে পারে না। তাই বাচ্চাকে কেন্দ্রে নিয়ে আসে এবং
পরীক্ষার মাঝখানে মা বাইরে এসে বাচ্চাকে খাইয়ে দিয়ে যায় ২/৩ বার। একটি বাচ্চা পাঁচ
মাস বয়স, খুব কাঁদছিলো। বাচ্চাটির নানু কিছুতেই থামাতে পারছেন না। আপ্রাণ চেষ্টা
করে যাচ্ছেন। মা এসে একবার দুধ খাইয়ে গেছেন। তবু থামছে না। কারণ মায়ের কাছে সবসময়
থেকে অভ্যস্ত বাচ্চাটি বাইরের পরিবেশে আরাম পাচ্ছে না।মা,বাচ্চা,বাচ্চার
নানি/দাদির এই লড়াই, মাতৃত্বের লড়াই।
একবার আমার বিভাগে রসায়ন
এর একটা বিষয়ের ইনকোর্স পরীক্ষা নিচ্ছি। আমার এক ছাত্রী বাচ্চাকে নিয়ে এসেছে। কারণ
বাড়িতে কেউ নেই তাকে রাখার মতো। একটা ছোট্ট বৈদ্যুতিক পাখা নিয়ে এসেছে সাথে করে
যেনো গরম না লাগে কারণ বাবুটা গরম সহ্য করতে পারে না। হাঁটতে শিখেনি তখনও। বয়স এক
বছরের কম হবে। মেয়েকে কোলে নিয়েই ছাত্রী আমার পরীক্ষা শুরু করলো। কিন্তু চঞ্চল
মেয়ে বাবুটা একটু পরপর কলম টেনে নিচ্ছে না হয় খাতা ধরে টানছে। লিখতে দিচ্ছে না
কিছুতেই, হয়তো ও মনে করছে মা মনোযোগ দিচ্ছে না তার দিকে। আমি আমার কোলে নিতে
চাইলাম তাও আসলো না। শেষ পর্যন্ত এভাবে পরীক্ষা শেষ করলো ছাত্রীটি।
আবার এমন ও দেখেছি,
ব্যবহারিক পরীক্ষা চলছে, ছাত্রীর দশ ঘন্টা আগে অপারেশন করে বাচ্চা হয়েছে,
এম্বুলেন্সে করে কলেজে এসেছে শুধু মাত্র স্বাক্ষর করার জন্য, অনুপস্থিত যেনো না
হতে হয়। তাহলে পরেরবার এই পরীক্ষাটা দিলেই হবে।
আমি নিজে একজন চাকরিজীবী
মা, তাই এমন পরিস্থিতি আমাকেও প্রতিনিয়ত সামাল দিতে হয়েছে। বাসা থেকে বের হতে গেলে
বাচ্চাদের কান্নায় নিজের চোখ ভিজে যেতো।আমার সেই লড়াই এর পুরোভাগে নেতৃত্ব
দিয়েছেন, আমার সন্তানদের সারাদিন আগলে রেখেছেন আমার মা। আমিও বলি, মায়ের মূল্য
তাই, গাঁয়ের চামড়া দিয়ে মাকে পাপোস বানিয়ে দিলেও শোধ হয় না, হতে পারে না। এটাই
সত্যিই।
আগে তেমন বুঝিনি। মা কি
বুঝেছি নিজের সন্তান হওয়ার পর। যখন নিজে মা হয়েছি। সন্তানকে বুকে জড়িয়ে ধরা, এ এক
অসাধারণ অনুভূতি! মা ডাকে প্রাণটা জুড়িয়ে যায়। সন্তানের অসুস্থতা মায়ের পৃথিবীটা
অন্ধকার করে দেয়।
সন্তানের সান্নিধ্যে ভালো
থাকুন পৃথিবীর সকল মায়েরা, মা দিবসে এই শুভ কামনা।রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বা
ইয়ানিস সাগিরা।
হামিদা আনজুমান
ছড়াকার, কবি
সহযোগী অধ্যাপক, নরসিংদী সরকারি কলেজ।